Header Ads Widget

Responsive Advertisement

আনন্দ ও আতঙ্ক ....

আনন্দ ও আতঙ্ক 

লেখক- ফারুক আহাম্মেদ

----------------------------------

শিরোনাম দেখেই যে কারো চক্ষু কপালে উঠার মতো অবস্থা । এ কেমন কথা ঈদে আবার আতঙ্ক থাকে নাকি ? ঈদ মানেই তো  অবিরাম ও অনাবিল আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উৎসব,  ভিন্ন আমেজ, আবেগ, অনুভূতি ,সেমাই, পায়েস, মাংস, কোর্মা,  পোলাও, ফিরনি, জর্দা, নতুন পোশাক, বকশিশ, আত্মীয় স্বজন সহ এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে বেড়ানো, আনন্দমেলা , টেলিফ্লিম, টেলি নাটক ও  বিভিন্ন  বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানে ডুবে বুঁদ হয়ে থাকা। 

অথচ এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ব্যতিক্রম ধর্মী ।

এবার সহ বিগত চার-চারটি ঈদ করোনার আতঙ্কের  মধ্যে  পালন করতে হয়েছে । এই রকম ঈদ উৎসব বা উদযাপন আমরা কি কেউ কখনো চিন্তা করেছি বা   আমাদের মানসপটে কখনো কি এটা এসেছে ?প্রতিবারই আশায় ছিলাম এই কষ্ট বা আতঙ্কের ঈদ বোধহয় এবারই শেষ, আগামী বছর মনে হয় আনন্দের     ঈদ হবে । এই করতে করতে চারটি ঈদ হয়ে গেল । 

কবি কাজী  নজরুল ইসলাম  যেমন ঈদ নিয়ে  বিখ্যাত  গান লিখেছেন " ও মোর রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ " তেমনি এখন আমাদের লিখতে হবে " হায় , করোনার ই মধ্যে এলো কষ্টেরই ঈদ..." 

চারদিকে কেমন যেন এক অদৃশ্য ও অজানা আতঙ্ক আর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি , উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা, দুঃসংবাদ ও মৃত্যু সংবাদ শুনে শুনে  সবার চোখে মুখে গভীর  পেরেশানির  সুস্পষ্ট  ছাপ। কখন যে কি হয়ে যায় কিছুই  বলা যায় না । এই চিন্তায় সবাই অস্থির । করোনায়  রেকর্ড সংখ্যক হতাহতের ( মৃত্য- ২৩১জন আক্রান্ত ১৩ হাজার প্লাস ) সংবাদের মধ্যে দিয়েই আমাদের এবার ঈদ উদযাপন করতে হবে । তাই  ঈদের   যে আনন্দ বা আমেজ সেটা অনেকটাই ম্লান, বলা যায়  cold and colourless .সব জায়গায় স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দুরত্ব মানার কঠিন ও কঠোর হুঁশিয়ারি । সামাজিক দুরত্ব মানলে তো অসামাজিক হতে হবে এবং সবাই সেটা হওয়ার চেষ্টা করছি । আসলে  বাচ্চারাই কিন্তু   ঈদকে  প্রাণবন্ত ও প্রাণোচ্ছ্বাস  করে তোলে । বাচ্চাদের ছোটাছুটি ও হৈচৈ ছাড়া ঈদ মনেই  হবে না । কয়েক কয়েক বছর আগেও   বড়দের সাথে বাচ্চাদের গরুর হাটে নেওয়া হতো । 

তাদের পছন্দ অনুযায়ী গরু কিনে  গলায় মালা পড়িয়ে রশি ধরে রাস্তায় রাস্তায় উৎসুক জনতাকে  গরুর দাম বলতে বলতে  গলা শুকিয়ে বাড়ি পৌছানো অন্যরকম   আবহ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেত। তারপর বাড়িতে আনার পর বাচ্চাদের সাথে গরুর যে সখ্যতা,  মনে হতো, না জানি কত দিনের চেনা  জানা ।এমনিতে গরুর সামনে কেউ কখনো যায় না বরং গরুর গন্ধে নাক ছিটকায়। কিন্তু কোরবানির গরুর ব্যাপারে  অধিক উৎসাহ-উদ্দীপনা    দেখা যায়  । সম্পূর্ণ  নতুন ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে   মাঝে মধ্যে হঠাৎ গরু তেড়ে মেড়ে  গুতা দিতে আসলে বাচ্চারা মধুর চিৎকারে হুড়োহুড়ি করে একে অপরের উপর গিয়ে  হুমড়ী খেয়ে পড়ে । পরক্ষণে আবার গরুর সামনে থিতু হয়ে পড়ে । এছাড়া বড়দের পক্ষে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা সাক্ষাত শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলির চিরাচরিত যে রেওয়াজ সেটাও এক রকম অ ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা । 

এতো সব সত্ত্বেও  ঈদ বলে কথা।বছরে একবার আসে।কিছু না কিছু ঈদের আনন্দ উপভোগ ও উদযাপন  করতেই হয় । তাই সবার ঈদ আনন্দময় ও সুখময় হয়ে উঠুক। আর আশায় বুক বাঁধি আগামী ঈদ গুলি যেন করোনামুক্ত , সুন্দর ও  স্বাভাবিক পরিবেশে হয় ।

 মানুষ সব সময় আশায় বুক বাঁধে । আশা মানুষ কে সামনে নিয়ে যায় ও দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায় ।  আশায় বুক  বাঁধার জন্য একজন খ্যাতিমান  আমেরিকান ঔপন্যাসিক Ernest Hemingway তার বিখ্যাত উপন্যাস " The Sun Also Rises " এ বলেছেন   " No matter what does happen today,  and no matter what tragedy or mistakes are made by you, there is always hope for a better tomorrow which may have more meaning and significance than today. If it doesn't, there is always the  next day-- or  the day after that ". সবশেষে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক ।

Post a Comment

0 Comments